নবায়নযোগ্য শক্তির খাতে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

নবায়নযোগ্য শক্তির খাতে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের একদল গবেষক সম্প্রতি এমন এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা বৃষ্টির ফোঁটা থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। এ প্রযুক্তির সাহায্যে ভবিষ্যতে শহরের প্রতিটি ছাদ রূপ নিতে পারে একেকটি ক্ষুদ্র বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
গবেষকদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি মূলত "প্লাগ ফ্লো" নামক একটি বৈজ্ঞানিক নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই পদ্ধতিতে পদার্থসমূহ একত্রে না মিশে, ধারাবাহিকভাবে একটির পর একটি প্রবাহিত হয়—যেমন রেলের বগিগুলো একটার পেছনে আরেকটা চলে কিন্তু একে অপরের সঙ্গে মিশে না। রাসায়নিক রিঅ্যাক্টর এবং পানির পরিশোধন প্রক্রিয়ায় এর ব্যবহার ইতোমধ্যেই দেখা গেছে, এবার এই কৌশলকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহারের পথে এক বিশাল অগ্রগতি হলো। প্রযুক্তিটির কার্যপ্রণালিতে গবেষকরা একটি উল্লম্ব টিউব ব্যবহার করেন, যেখানে বৃষ্টিপাতের অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। টিউবের ভেতর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটার মাঝে থাকে একটি ক্ষুদ্র বায়ুপকেট, যার ফলে তৈরি হয় একটি সুনির্দিষ্ট "প্লাগ ফ্লো"। এই প্রবাহ চলাকালে যখন ফোঁটাগুলি পৃথকভাবে নিচের দিকে পড়ে, তখন চার্জ বিচ্ছেদের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় বিদ্যুৎ। পরীক্ষামূলকভাবে গবেষকরা মাত্র একটি সাধারণ ডিভাইস ব্যবহার করে ১২টি এলইডি বাল্ব জ্বালাতে সক্ষম হন। এই প্রযুক্তি প্রচলিত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তুলনায় অনেক বেশি কমপ্যাক্ট এবং শহুরে পরিবেশে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। বড় নদী বা জলপ্রপাতের মতো উৎসের প্রয়োজন নেই, বরং যে কোনও বৃষ্টিবহুল শহরের ছাদে এটি স্থাপন করলেই চলবে। গবেষকদের দাবি, এই প্রযুক্তি পতিত জলের শক্তির প্রায় ১০ শতাংশকে বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারে—যা সৌর কিংবা বায়ুশক্তির বিকল্প হিসেবে বেশ কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্ভাবন শুধু শক্তি উৎপাদন নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে আমাদের প্রতিটি বাড়ির ছাদই হয়ে উঠতে পারে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক সম্ভাবনাময় কেন্দ্র।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Popular Items